নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর
“আমরা সাধারণ মানুষ, আমাদের অপরাধ কী? প্রতিবাদ করা?” — শুক্রবার বিকেলে হোতাপাড়ায় গর্জে উঠল চার শতাধিক কণ্ঠ। দাবি একটাই— ‘মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও চাঁদাবাজির বিচার চাই।’
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িবহরে হামলার ঘটনার পর বাসন থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলাকে ‘সাজানো ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ দাবি করে এদিন মানববন্ধনের আয়োজন করে গাজীপুর সদর উপজেলার ছাত্রসমাজ ও স্থানীয় জনতা। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে বিকেল সাড়ে চারটা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে প্রতিবাদ কর্মসূচি।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা অভিযোগ করেন, মামলার বাদী খন্দকার আল-আমিন একজন চিহ্নিত মাদকসেবী ও চাঁদাবাজ। তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অভিযোগ থাকলেও প্রশাসনের কিছু অসাধু সদস্যের ছত্রছায়ায় সে এলাকায় ভয়ভীতি ও সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে।
এক বিশাল ব্যানারে লেখা ছিল— “মিথ্যা মামলা দিয়ে অর্থ আত্মসাৎকারী খন্দকার আল-আমিনের বিচার চাই”। ব্যানারে ছিল আল-আমিনের একটি ছবিও।
‘টাকার বিনিময়ে জামিন’— গলায় গলায় ক্ষোভ
মানববন্ধনের সভাপতিত্ব করেন মো. সুজন শেখ। তিনি বলেন, “আজ যারা মিছিলে আছে, তারা কোনো দলের লোক না— তারা এ এলাকার ভুক্তভোগী। মামলা দিয়ে হয়রানি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার দিন শেষ হয়ে এসেছে।”
মামলায় অন্যতম বিবাদী আব্দুল্লাহ আল মামুন রাজিব বলেন, “১৬ জনের কাছ থেকে ২২ লাখ টাকা আদায় করেছে আল-আমিন ও তার লোকজন। মামলা দিয়ে এমন বাণিজ্য আর কতদিন চলবে?”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক আজিজুর রহমান তুহিন বলেন, “আল-আমিনের বিরুদ্ধে যে মুখ খুলবে, তার জন্যই মামলা প্রস্তুত। ভয়ভীতি, সন্ত্রাস, মাদক— এই চক্র গাজীপুরকে জিম্মি করে রেখেছে।”
সঞ্চালক শরিফুল ইসলাম বলেন, “এই আন্দোলন কোনো দলীয় কর্মসূচি নয়। এটি এলাকার সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ। প্রতিটি নিরীহ মানুষের পাশে আছি আমরা।”
হামলার দিনটি: ৪ মে’র সন্ধ্যা
প্রসঙ্গত, গত ৪ মে সন্ধ্যায় সালনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ঢাকায় ফেরার পথে চান্দনা চৌরাস্তার যানজটে আটকে পড়েন এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ। সেই সময় একদল মোটরসাইকেল আরোহী তার গাড়ির কাচ ভেঙে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে ঢাকায় পাঠায়।
প্রশাসনের নিরবতা: অজুহাত না জবাব চায় জনতা
মানববন্ধনে বারবার উঠেছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন। বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন খানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি।তদন্ত দাবি ও আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বক্তারা বলেন, “এই সাজানো মামলার নেপথ্যে কারা, তা খুঁজে বের করতেই হবে।” তারা বলেন, “মামলা প্রত্যাহার ও প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় না আনা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ছি না।”